(পূর্ববর্তী অংশের পর)
বিকেলে সায়েলদের বাসায় গেল মেরিনা। কলিংবেল বাজতেই দরজা খুলে দিলেন সায়েলের মা নাহিদা বেগম।
: হাই আন্টি!
: কে তুমি মা?
: আমি সায়েলের সহপাঠী। মেরিনা।
: ও আচ্ছা! তুমিই তাহলে মেরিনা! ভারি মিষ্টি মেয়ে তো!
মেরিনার থুতনিতে ধরে আদর করলেন নাহিদা বেগম।
: মেরিনা, মা, প্লীজ একটু বসো। আমার ছেলেটাকে একটু বিদায় দিয়ে আসি।
মেরিনাকে বসিয়ে ছেলের কাছে গেলেন তিনি।
কৌতুহলী ভঙ্গিতে সবকিছু দেখছে মেরিনা।
খুব গোছানো , ছোট্ট সুন্দর একটা বাড়ি।
সবকিছু ছিমছাম, পরিপাটি। কোথাও বাড়াবাড়ি রকমের আড়ম্বরতা নেই। হাঁটতে হাঁটতে একটা রুমের দরজায় এসে দাঁড়ালো। খোলা দরোজার ওপাশে দেখল এক অভাবনীয় দৃশ্য। সায়েলকে তার মা কপালে চুমু খেয়ে বিদায় দিচ্ছে!!!
দৃশ্যটা সাধারণ হলেও তার কাছে সত্যিই অভাবনীয়।
কারণ কবে নাগাদ তার মা তাকে ভালোবেসে এমন করে চুমু খেয়েছিল, তার ঠিক মনে পড়ে না।
ছোটবেলায় বড় খালার কাছে মানুষ হয়েছে মেরিনা। তবে তার জন্য প্রতিমাসে তার বাবা মাকে বেশ কিছু ডলার গুনতে হতো। বড় কাঠখোট্টা টাইপের মানুষ বড় খালা। ডলারের হিসেবটা তাই প্রতিমাসে তিনিও বড় শক্তভাবেই গুনতেন।
বাবা মায়ের ভালোবাসা কী জিনিস তাই বোঝে না মেরিনা।
তার বাবা মা সারাজীবন ধন- দৌলত, ঐশ্বর্য্যের পেছনেই সময় ব্যয় করেছে।
অথচ সময় করে নিজেদের একমাত্র সন্তানের সাথে একটু হাসি দিয়ে কথা বলার সময়টুকু হয় নি!
ছেলেকে বিদায় দিয়ে ফিরে এলেন নাহিদা বেগম।
: মা, আমাদের ধর্ম সম্পর্কে তোমার জানার এত আগ্রহ দেখে সত্যিই খুব ভালো লাগছে। তুমি কী জানতে চাও বলো।
: আন্টি আমি কী জানতে চাই আমি নিজেও জানিনা।
আসলে আমি প্রচন্ড ডিপ্রেশনে ভুগছি।
: কেন, কেন মেরিনা? তোমার তো এ বয়সটা আনন্দে, উচ্ছলতায় কাটানোর বয়স!
: আমি জানি না আন্টি! আমার তো সবি আছে। রূপ- সৌন্দর্য্য । তাছাড়া বাবা আমাকে মানথ্লি প্রচুর ডলার দেয়। যেটা আমি ইচ্ছেমত খরচ করি। কিচ্ছুর কমতি নেই। তবুও মনে হয় কী যেন নেই। বুকের ভেতর কোথায় যেন হাহাকার আর শূন্যতা…
আন্টি, একটা কথা জানতে চাই।
: হ্যাঁ, অবশ্যই মেরিনা!
: আপনি কি সায়েলকে সবসময়ই এভাবে চুমু খান?
মেরিনার প্রশ্ন শুনে হাসলেন নাহিদা বেগম। বললেন-
: মা, বাংলাদেশের মেয়ে আমি। স্বামীকে হারিয়েছি আজ পনেরোটা বছর হলো। স্বামীর ছোট্ট ব্যাবসা আর সায়েলকে আঁকড়ে ধরেই তো বেঁচে আছি।
: এত বছর পরও আপনি সিঙ্গেল মাদার?!! চোখ কপালে উঠেছে মেরিনার।
: আমি যদি দ্বিতীয় বার বিয়ে করতাম , তবে সায়েলের কী হতো বলো তো?!
তাছাড়া আমাদের ধর্মে এমন নারীদের জন্য মৃত্যুর পর বিশেষ প্রতিদানের আশ্বাস দেয়া হয়েছে।
: এর জন্য আপনাদের কে প্রতিদানও দেয়া হবে?
: হ্যাঁ মেরিনা। তাছাড়া আমাদের ধর্মে মায়েদেরকে এক বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে- মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।
তার কথাগুলো শুনে আবেগে তাকে জড়িয়ে ধরল মেরিনা।
অশ্রু যেন আজ বাঁধ মানছে না!
: আপনি আমার মা হবেন আন্টি?
নাহিদা বেগম কী বলবেন বুঝতে পারছেন না।!!
°°°°°°°°°°°°°°°°
প্রচন্ড অস্থির লাগছে মেরিনার । স্টাডিতে কোন ভাবেই মন বসাতে পারছে না। পছন্দের মিউজিক গুলো আজ খুব পানসে লাগছে। একটার পর একটা মুভি চেঞ্জ করেই যাচ্ছে , সবকিছুতেই বোরিংনেস!! উফ্!!…
কেন সে কোন কিছুতেই মন বসাতে পারছে না?
বার বার কেন সায়েলকে মনে পড়ছে? সে যা চায় সেটা তো কখনোই হবার নয়।
কতটা পবিত্র সায়েল। তার হাত তো দূরে থাক , তার দিকে একটু তাকায় নি পর্যন্ত।
আর সে!! এডাল্ট (প্রাপ্ত বয়স্ক) হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত কতজন পুরুষের সাথে রাত কাটিয়েছে সে নিজেই জানে না।
তারই বা দোষ কি!
ছোট কাল থেকেই দেখে আসছে- মদ আর নারী ছাড়া তার বাবার বেডরুম কখনোই জমে না। আর মা রাত কাটায় হোটেল, বারে কিংবা নাইট ক্লাবে!
এতটা অসুচি নিয়ে সে কিভাবে সায়েলের সামনে দাঁড়াবে!
(চলবে) ….
লেখিকা – ফিরদাউসি মাহমুদ